ভালোবাসার দিবস, সোমবার।
সকাল থেকে অফিস এর কাজ গুলো পাতার ওপর ভারী বর্ষার জল বিন্দুর মতন আসছে আর ভার রাখতে না পেরে নুইয়ে পড়ছে একটু একটু করে।
মনের মধ্যে এক অবাস্তব, অসম্ভব ইচ্ছের জ্বালায় অস্বস্থিকর এক মেজাজ এর সৃষ্টি হয়েছে।
ধরুন এক হেরে যাওয়া সৈনিক , শত্রুপক্ষের সীমান্তের গন্ডি তে আটকে পড়েছে এবং সে জানে আর কিছুক্ষন এর অপেক্ষা তারপরেই সে ধরা পড়বে শত্রুর হাতে এবং হয়তো শাহিদ হবে তার আপনজন দের শেষবারের মতন না দেখেই,অথচ মন কিছুতেই মানছে না এই পরাজয়, বলছে না আরেকটু লড়, আরো কিছুক্ষন, কিছুদিন বাঁচো। সে যে তখন কি করবে বুঝে পায়না... আত্মসমর্পণ না গা ঢাকা দেওয়া না বন্দুক উঠিয়ে অপেক্ষায় থাকা...
তেমনি..
যে ভালোবাসা পাওয়া যাবেনা কোনোদিন নিজের মতন করে, এক প্রকার অসম্ভব, যদি না আল্লাহ তালা, ঈশ্বর, গড এনাদের মধ্যে কেউ কিছু গভীর শড়যন্ত্রের মাধ্যমে তা পাইয়ে দেন, তবে কেনোই বা ওনারা এত কষ্ট নেবেন একজন যেকোনো মানুষ এর জন্যে?
সত্য ভালোবাসে আলো কে।
সে আলোর রোজকার অবহেলা অনুভব করে নিজের মতন কোরে... আলোর রোজকার না পাওয়া গুলোকে পাইয়ে দিতে তার মন একপ্রকার দু-টুকরো হয়ে ছুটে যেতে চায় আলোর কাছে..
দুপুরের খাওয়া টা সে নিজে হাতে খাইয়ে দিতে চায় তাকে একবার... মুখ মুছিয়ে বলতে চায় "শীত করছে "? চাদর টা এনে দেবো? পড়ন্ত রোদে একটু বসবে? তোমার তো রোদে বসতে ভালোলাগে।...."
মনে করিয়ে দিতে চায় অসুধ এর সময় গুলি। কপাল থেকে চুল গুলি সরিয়ে কানের পেছনে এঁটে দিতে চায়.. চশমা টা খুলে পকেট থেকে রুমাল দিয়ে ধুলো ও বাস্পের দাগ গুলি মুছে দিয়ে আবার পড়িয়ে দিতে চায় তাকে.
রোজ হয়তো করবে না। ছেলে রা ওতো "caring" হয়না তবু কখনো সখনো সে যে এইগুলো করতো তা সে জানে...
আলো কে তার ভিনদেশী এক ফুল মনেহয় যার যত্নের খুব প্রয়োজন। তার শুধু সেই ফুলের ঘ্রাণ ই চাওয়া বা পাওনা..
আজ বড়ো চঞ্চল লাগছে তার, ছুটে গিয়ে আলোর হাত দুটো ধরতে ইচ্ছে করছে। পলক হীন দৃষ্টি তে তার দিকে চেয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে।
আর রোজকার মতন ইচ্ছে করছে আলোর কথা না ভাবতে। ভাবলে কষ্ট বাড়ে, ক্লান্তি আসে।
একেক সময় মনেহয় তার, ছুটে চলে যাই। লুকোনো থেকে বেরিয়ে এসে লড়ি, আহত হই এই সমাজের beyonet এর খোঁচায়, ধর্মীয় গুলি তে এফর ওফর হয়ে যাক তার শরীর তাও একটি চেষ্টা সে করুক জয় এর। হয়না।
ভালোলাগা যে কখন ভালোবাসায় পরিণত হয়েছে সে তো আর ভেবে রাখেনি...
সত্যের ডান চোখের কোণ থেকে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো তার গালে । মুছে নিয়ে কাজে মন দিতে চাইলো.. কি জানি আজ কাজ হবে কিনা।
খুব যত্ন করতে চায় সে আলোর... আলোর যত্ন ঠিক করে হয়না সে জানে। সেও আঘাত পায়,সেও বুঁকের ভেতরে খা খা করা শূন্য কে অনুভব করে সত্য সত্যই...
হেডফোনে যেই গান টি চলছে তার গীতিকার সত্যের খুব পছন্দের এক লেখক। গান টাও খুব প্রিয় তার। অদ্ভুত এক শান্তি আছে সেই গানে। এরকম চাপা হৃদয়ের ফেটে বেরোতে চাওয়া অনুভূতি গুলোর বেদনার দিন গুলোতেই সে এই গান টি শোনে.. আলো কখনো সত্যের হবে না সত্য চিরদিন অনুভব করবে না, অসাড় হয়ে পড়বে। পড়ছে। শুধু একটি বার যদি আলো কে বুকে আগলে ধরে তার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলতে পারতো, "কখনো চোখের পানিকে তোমার বেহিসেবি হতে দেবোনা " হয়তো.....
কানে গান টি বলছে
"যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো এক বর্ষায় "।
ইতি সত্য - আলো
Comments